শোলাকিয়ায় দেশের বৃহৎ ঈদের জামাতে লাখো মুসল্লির নামাজ আদায়

আমিনুল হক সাদীঃ কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়ায় এবারও দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (২২ এপ্রিল) সকাল ১০টায় এ ঈদগাহে ঈদুল ফিতরের জামাত হয়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা কয়েক লাখ মুসল্লির এ জামাতে ইমামতি করেন মাওলানা ফরীদউদ্দীন মাসঊদ। উপমহাদেশের বৃহত্তম ঈদুল ফিতরের জামাতে অংশ নিতে ভোর হতে শোলাকিয়ায় আসতে শুরু করেন। এবার প্রায় সাড়ে চার লাখ মুসল্লির সমাগম হয়েছে বলে জানান মাঠ পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী ছিদ্দিকী।

সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে ঈদগাহ মাঠ কানায় কানায় ভরে যায়। পরে আশপাশের রাস্তা, বাসাবাড়ির ছাদ, পতিত জমি, পাশে বহমান নরসুন্দা নদীর বিশাল সেতুর ওপর অবস্থান নেন মুসল্লিরা। কয়েক হাজার মানুষ দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করেছেন। করোনা মহামারির কারণে টানা দুই বছর শোলাকিয়ায় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়নি। ফলে আগে থেকেই ধারণা করা হয়েছিল, এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় মুসল্লি সমাগম অনেক বেশি হবে।

জামাত শুরু হয় সকাল ১০টায়। এবারের ১৯৬তম জামাতের আগে বয়ান করেন প্যানেল ইমাম জেলা শহরের বড়বাজার জামে মসজিদের খতিব মাওলানা শোয়াইব বিন আব্দুর রউফ। বয়ান করেন অপর প্যানেল ইমাম মারকাস মসজিদের খতিব মাওলানা হিফজুর রহমান খান।
জামাত শুরু হওয়ার আগে ঈদগাহ কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জিল্লুর রহমান, পৌর মেয়র মাহমুদ পারভেজ ও ঈদগাহ কমিটির সদস্য সচিব সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী লাখ লাখ মুসল্লিকে ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন। এবারের জামাতেও অন্যান্য বছরের মতো পার্শ্ববর্তী ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা, শেরপুর, জামালপুর, বৃহত্তর সিলেট, নরসিংদী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের নানা স্থান থেকে গাড়ি ভাড়া করে বহু মুসল্লি জামাতে শরিক হয়েছেন। শোলাকিয়ার জামাতে অংশ নিতে বাংলাদেশ রেলওয়ে ভৈরব ও ময়মনসিংহ থেকে দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করে। ট্রেনে শত শত মানুষ জামাতে আসেন। মাঠের রেওয়াজ অনুযায়ী, বন্দুকের ফাঁকা গুলির শব্দের মাধ্যমে আজ সকাল ১০টায় জামাত শুরু হয়।

জামাত শেষে মোনাজাতে সবার মাগফিরাত ও হেদায়েত কামনা করা হয়। বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবারের নিহত সবার জন্য দোয়া করা হয়। দক্ষ হাতে দেশ পরিচালনা করায় প্রধানমন্ত্রীর জন্য দোয়া করা হয়। দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি অব্যাহত রাখার জন্য দোয়া করা হয়। বিশ্ব শান্তির জন্য দোয়া করা হয়।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, রৌদ্রোজ্জ্বল সকাল হওয়ায় ১৩টি উপজেলার লাখ লাখ মুসল্লি হেঁটে শোলাকিয়ায় চলে আসেন। এবার যেকোনো বছরের তুলনায় মুসল্লির সংখ্যা বেশি ছিল। তিনি শান্তিপূর্ণভাবে জামাত শেষ হওয়ায় সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ জানান, এবার বিশেষ নিরাপত্তাবলয়ে শোলাকিয়া ময়দানকে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে সিসি ক্যামেরা, ড্রোনসহ নানা প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।

শোলাকিয়া ঈদগাহ আড়াই শতাধিক বছরের প্রাচীন হলেও ১৮২৮ সালে প্রথম সর্বাধিক সোয়া লাখ মুসল্লির সমাগম হয়েছিল বলে উচ্চারণ বিবর্তনের ধারায় এই ঈদগাহের নামকরণ শোলাকিয়া হয়েছে বলে জনশ্রুতি রয়েছে।

জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জায়নামাজ ছাড়া মোবাইল ফোন, ছাতা বা ব্যাগ নিয়ে মাঠে প্রবেশ করায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া ছিল। র‌্যাব ও পুলিশের পাশাপাশি ৫ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন ছিল। ছিল এপিবিএন। র‌্যাব ও পুলিশের চারটি ওয়াচটাওয়ার ছিল। পুরো মাঠ সারাক্ষণ পর্যবেক্ষণের জন্য ক্যামেরাবাহী চারটি ড্রোনও ব্যবহার করা হয়েছে। ঈদের আগের দিন ঈদগাহে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। এ ছাড়া শহরের সরযূ বালা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে মহিলাদের জন্য একটি পৃথক ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *